সারাদেশ
  অজ্ঞাত দুই যুবক লুটে নিলো কুড়িগ্রামের বৃদ্ধের শেষ সম্বল
  27-04-2024
‘দুটা ছেলে আমার রিকশায় ওঠে। আমাকে বলে পার্কের মোড় যাব। তারপর কি করল, জানি না৷ জ্ঞান ফিরে দেখি এখানে (ডিসি অফিসের দেয়ালের পাশে), দেখি রিকশা নাই।’ কুড়িগ্রামে সদর থানার সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া হাসপাতালে শুয়ে কাঁদতে কাঁদে এসব কথা বলেন। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে নিজের একমাত্র জীবিকার ব্যাটারিচালিত রিকশাটি হারিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সামনের পুকুরপাড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।পুকুরটির পাশেই কুড়িগ্রাম সদর থানা, তার সামনেই জেলা পুলিশ লাইনস ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এ রকম জনগুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় দিন-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জেলাজুড়েই চলছে সমালোচনা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার টগরাই হাট এলাকার কাগজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া। ৫ মাস আগে একটি এনজিও থেকে তিনি ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং নিজের ১০ শতক সুপারি বাগান ৭০ হাজার টাকায় বন্দক রেখে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি কেনেন। রিকশাচালককে উদ্ধার করা যুবক আল হোসাইন কংকন বলেন, ‘আজ দুপুর পৌনে ১ টার দিকে আমি এবং আমার বন্ধু সাকিব তাজ কুড়িগ্রাম সরোবরে বসে ছিলাম। এমন সময় দেখতে পাই এক বৃদ্ধ ডিসি অফিসের দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁপছে। এর ১-২ মিনিট পর তিনি ওখানে বসে পড়েন। আমরা ভাবলাম হয়তো গরমে এ অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দৌড়ে যাই এবং তার মুখে পানি দেই৷ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুটা ছেলে আমার রিকশায় ওঠে, আমাকে বলে পার্কের মোড় যাব। তারপর কি করল জানি না৷ এখানি রাখি গেল, দেখি রিকশা নেই৷” এই বলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আমরা দৌড়ে পাশের থানায় যাই এবং ডিউটি অফিসারে সঙ্গে কথা বলি৷ তারপর আরও কয়েকজন ছেলের সঙ্গে পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে যাই।’রিকশাচালকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘হামার সুপারির বাগান বন্দক থুইছি ,ঋণ করছি, সোগ মিলি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়া ৫ মাস হয় রিকশা কিনছি। হামার বেটা দুইটা মানুষের ট্রলি চালায়, হামার সোগ শ্যাষ হইল। সংসার চলবে কিডি।’রিকশাচালক বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন।কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিনুর রহমান সরদার বলেন, দুপুরে রিকশাচালককে হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন। এখনও জ্ঞান ফেরেনি।
 কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দুপুরে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা নাকি অন্য কিছু বৃদ্ধের কাছ থেকে না শোনা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিবার থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি।’কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। রিকশাচালককে পুর্নবাসনসহ তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং ১২:০১ পিএম.